ডুমুরের গুণাগুণ

পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে হাজার বছর আগে ডুমুর চাষের খোঁজ পাওয়া গেছে। এশিয়ার পশ্চিমাঞ্চলে এটি প্রাকৃতিকভাবে জন্মে। পনের শতকে ইংল্যান্ড এবং মেক্সিকােতে ঔষধি গাছ হিসেবে এটি বেশ পরিচিতি লাভ করে এবং ব্যাপকভাবে ডুমুরের চাষ শুরু হয়। এটি বাংলাদেশের সর্বত্র জন্মে। পশ্চিম সাইবেরিয়া এবং মধ্য এশিয়ার কিছু দেশে ডুমুর জন্মায়। সিরিয়া, সৌদি আরব এবং ইরানে ডুমুর প্রাকৃতিভাবে জন্মে। ক্যালিফোর্নিয়াতে ১৮৮১ সালে ডুমুরের সন্ধান পাওয়া যায়।
রাসায়নিক উপাদান : ডুমুরে প্রচুর পরিমাণ শর্করা এবং বিভিন্ন বিজারক চিনি যেমন ফ্রুক্টোজ ও গ্লুকোজ পাওয়া যায়। এতে ৫০% পর্যন্ত মনোস্যাকারাইড এবং অলিগো-স্যাকারাইড থাকে। এতে কিছু ফিউরানো-কোমারিন যেমন সোরালিন এবং বারগাপটিন পাওয়া যায়। ডুমুরে সাইট্রিক এসিড, ম্যালিক এসিডসহ কিছু জৈব এসিড থাকে। ডুমুরের প্রতি ১০০ গ্রাম খাদ্য উপযোগী অংশে ৩৫২ ক্যালরি খাদ্যশক্তি, ৬ গ্রাম প্রোটিন, ১.২ গ্রাম ফ্যাট, ৭ গ্রাম ফাইবার, ৩.৮ গ্রাম অাঁশ থাকে। এতে পেকটিন এবং মিউসিলেজ জাতীয় পদার্থ থাকে।
প্রতি ১০০ গ্রাম ডুমুরে প্রাপ্ত উপাদান : ক্যালরি-৩৫২, প্রোটিন-৬ গ্রাম, ফ্যাট-১.২ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট ৯ গ্রাম, ফাইবার-৭ গ্রাম, অাঁশ-৩.৮ গ্রাম, ক্যালসিয়াম-২২০ মিলিগ্রাম, ফসফরাস-১৩৩ মিলিগ্রাম, আয়রন- ২.৭ মিলিগ্রাম, সোডিয়াম-৯ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম-৮৬২ মিলিগ্রাম, ভিটামিন এ-৩৪৭ মিলিগ্রাম, থায়ামিন (বি১)-০.২৫ মিলিগ্রাম, রিবোফ্লাভিন (বি২) ০.২৫ মিলিগ্রাম, নিয়াসিন-২ মিলিগ্রাম, সি-৯.২২ মিলিগ্রাম।
পবিত্র কোরআনে সুরা তীনের শুরুতে তীন বা ডুমুরের উল্লেখ আছে। এর ফারসি ও ইউনানী নাম আনজির।

ডুমুর ফলের উপকারিতা অর্থাৎ এর বিভিন্ন ঔষুধিগুণ আলোকপাত করা হলঃ-
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে : ডুমুরে পটাশিয়ামের আধিক্য আছে, পটাশিয়াম উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর।
ওজন ঠিক রাখে : ডুমুর অাঁশসমৃদ্ধ ফল, অাঁশ ও অাঁশসমৃদ্ধ খাবার ক্ষুধা নিবারণের পাশাপাশি ওজন ঠিক রাখতে ভূমিকা রাখে।
ইনসুলিন নিয়ন্ত্রণে : ডুমুরের পাতায় এন্টিডায়াবেটিক উপাদান রয়েছে যা ইনসুলিন উৎপাদন ও অবমুক্ত হওয়াকে স্থির রাখতে সাহায্য করে।
হৃদরোগে : ডুমুর ফলে প্রাপ্ত ফেনলিক এন্টিঅক্সিডেন্ট হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। মাঝারি একটি তাজা ডুমুর ফলে (৫০ গ্রাম) ৩৭ ক্যালরি থাকে।
ডায়াবেটিস প্রতিরোধে : গবেষণায় দেখা গেছে, ডুমুর ফল ও পাতার নির্যাস রক্তে গ্লুকোজ লেভেল কমাতে অত্যন্ত কার্যকর। কোলেস্টেরল লেভেল কমাতে : সাম্প্রতিক এক স্টাডিতে ডুমুর গাছের পাতার নির্যাসে দেহের জন্য ক্ষতিকর কোলেস্টেরল এলডিএলের পরিমাণ কমানোর কথা প্রকাশ করেছে।
ক্যান্সার প্রতিরোধে : ডুমুর ফলের কষে প্রাপ্ত রাসায়নিক উপাদান ৬.০ এসাইল, বিটা-ডি-গ্লুকোসাইল-বিটা-সাইটোস্টেরল ক্যান্সার প্রতিরোধে কার্যকর। এক গবেষণায় পাওয়া যায় দীর্ঘদিন ডুমুর ফল খেলে ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা কমে। এক তথ্যে পাওয়া যায় গড়ে ৮ বছর যাবৎ ডুমুর ফল খাওয়ায় ব্রেস্ট ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি ৩৪% কমেছে।
গবেষকরা এখনো নিশ্চিত নয় যে ঠিক কোন উপাদানের উপস্থিতি এরূপ ক্যান্সার সেল বৃদ্ধিতে বাধাদানকারী। এ নিয়ে ব্যাপক গবেষণা চলছে।
 source: http://www.bd-pratidin.com

Comments

Popular posts from this blog

কাঠ বাদামের ৯ গুন

কাঁচা আমের স্বাস্থ্য উপকারিতা

শতায়ু লাভের সাত উপায়